ডায়বেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে জামের ভূমিকা | ডা আবিদা সুলতানা | The role of jam in preventing diabetes and cancer | Dr. Abida Sultana
জাম গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এটি জুন, জুলাই বা আগস্ট মাসেও পাওয়া যায়।এটি ভিটামিন, খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ এবং এতে অনেক ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর অনন্য রঙ (বেগুনি কালো) এবং মিষ্টি-টক স্বাদের জন্য অনেকের কাছেই এটি প্রিয়। কিন্তু পছন্দের ফল হলেও জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? জামে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকার।
এই ফলের বীজ, পাতা ও ছালের ঔষধি মূল্য রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাগুলোতে ব্যবহার করা হয়। এই ফল বেশ সহজলভ্য বিশেষ করে এই সিজনে।
এবার চলুন জামের উপকারিতা দেখে নেওয়া যাক:
ডায়বেটিস প্রতিরোধে কাজ করে
ডায়বেটিস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জাম অনেকটাই প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা জ্যামবোসিন (Jambosin) ও অ্যালকোলাইড রক্তের চিনির মাত্রাকে স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে বিধায় রক্তে চিনির মাত্রা হুট করে বেড়ে যায় না।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এটি বেশ কার্যকরী। অনেকেই জানেন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম খুবই উপকারী। কারণ, এতে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রোপার্টিজ-এর কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যা স্টার্চ ও চিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরে শক্তির যোগান দেয়। আরেকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে জামের বীজ ৩০%-এর বেশি পরিমাণে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
আমাদের সবার সুস্বাস্থ্যের জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়, অবশ্যই সেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। জামের পুষ্টি গুণাগুণ ও ভিটামিন সমূহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে
জাম ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ক্যালসিয়াম ও আয়রন হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য খুবই দরকারি উপাদান। হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগীদের ও বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু ফলটি রাখা উচিত।
ক্ষুধাভাব বৃদ্ধি করে
হুট করেই খাবারে অরুচি বা ক্ষুধামন্দার সমস্যা দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক সমস্যা। বিশেষত গরমে এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। জামের স্বাদ ক্ষুধাভাব তৈরিতে ও বৃদ্ধিতে কাজ করে।
ইনফেকশন দূর করে
এতে ম্যালিক অ্যাসিড (malic acid), গ্যালিক অ্যাসিড (galic acid), অক্সালিক অ্যাসিড (oxalic acid) এবং ট্যানিনস (tannins)- এর মতো যৌগ রয়েছে। এতে একইসাথে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটড়ি প্রোপার্টিজ আছে। জাম শরীর থেকে টক্সিন এলিমেন্টস ও ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
জন্ডিস ও অ্যানিমিয়া নিরাময় করে
জামের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে আয়রন একটি। যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কম, তাদের জন্য এটি দারুণ উপকারী। জামে থাকা আয়রন অ্যানিমিয়া ও জন্ডিস নিরাময় করে এবং রক্ত স্বল্পতাজনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুব ভালো কাজ করে।
কাশির সমস্যা কমায়
ক্রনিক কাশির সমস্যা মুখ, গলা ও শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করে। জামে থাকা প্রোটিন ও অন্যান্য উপকারী পুষ্টিগুণ কাশির সমস্যা প্রশমিত করতে উপকারী ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
বেশ কয়েকটি গবেষণায় জামের কেমো প্রোটেক্টিভ (camo protective) বৈশিষ্ট্য নিয়ে ইনভেস্টিগেট হয়েছে। জে. সি. জ্যাগেটিয়া ও তার কলিগদের একটি গবেষণা অনুযায়ী এই ফলের নির্যাসে প্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য আছে, যা প্রমাণ করে যে এই ফলের নির্যাস ক্যান্সার কোষকে প্রিভেন্ট করে। এটি ফ্রি রেডিক্যালসকে নিউট্রিলাইজ করতেও ভূমিকা রাখে।
ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে
জাম দেহের ইমিউন সিস্টেম (immune system)-কে আরো শক্তিশালী করে তোলে। এতে থাকা ভিটামিন-সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সাধারণ সিজনাল ফ্লু এর বিরুদ্ধে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট আপ করে। সেই সাথে এটি মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। এটি স্কিনের জন্যও দারুণ উপকারী।
ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে
গরমের মৌসুমে ত্বকে একাধিক সমস্যা দেখা যায়। ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও সানবার্ন বা ট্যানের সমস্যাও দেখা দেয়। গরমের দিনে ত্বকের এই জাতীয় একাধিক সমস্যার সমাধানে কাজে লাগে জাম। এই ফলে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন সি। তার ফলে ব্রণের মতো সমস্যা দূর হয়। এ ছাড়াও ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব, লালচে দাগছোপ, র্যাশ এইসব সমস্যাও দূর করে রসালো এই ফল।
হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
জামে আছে অ্যালজিনিক অ্যাসিড (alginic acid) বা অ্যালজিট্রিন (algitrin), অ্যান্থোসিয়ানিন (anthocyanin) ও অ্যান্থোসায়ানাডিনস (anthocyanidin)-এর মতো পুষ্টিসমূহ যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং এই যৌগগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসসমৃদ্ধ যা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ রাখতে অসামান্য অবদান রাখে। এছাড়াও এটি পটাসিয়াম-এর একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার, যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা হার্ট অ্যাটাক-এর ঝুঁকি কমায়।
জামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যাদের জানা ছিলো না, তারা আজ বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলেন। সবশেষে বলতে চাই, গ্রীষ্মকালীন অন্যান্য ফলগুলোর মতো জাম হয়তো এতোটা জনপ্রিয় নয়, কিন্তু এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যা বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত সহজলভ্য ও সুস্বাদু এই ফলটিকে অবহেলা না করে আমাদের খাদ্য তালিকায় যোগ করা।
ওজন কমাতেও সাহায্য করে
জাম ফলের সাহায্যে ওজনও কমানো যায়। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ফলে এই ফল খেলে অনেকক্ষণ পেট ভর্তি থাকবে। এর পাশাপাশি এই ফল রসালো হওয়ার ফলে শরীর হাইড্রেটেড রাখে, যা গরমের দিনে খুবই দরকার। শরীর থেকে সমস্ত দূষিত বর্জ্য পদার্থ বের করে আনে এই ফলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপকরণ।
ডায়বেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে জামের ভূমিকা | ডা আবিদা সুলতানা
The role of jam in preventing diabetes and cancer | Dr. Abida Sultana
- ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
ডায়বেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে জামের ভূমিকা | ডা আবিদা সুলতানা
The role of jam in preventing diabetes and cancer | Dr. Abida Sultana
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health
- ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।
Follow Me -
Facebook : Dr. Abida Sultana
Youtube : Dr. Abida Sultana
tiktik : Dr. Abida Sultana
No comments