কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে থেকেও আপনি থাকতে পারেন চাঙা | ডা আবিদা সুলতানা | You can stay energized even while in front of a computer screen | Dr. Abida Sultana
আমাদের জীবনের বড় একটি অংশ এখন কাটে স্ক্রিনের সামনে। কম্পিউটারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা যেন আধুনিক কর্মজীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অভ্যাসই কি আমাদের ক্লান্ত, এলোমেলো আর ভারসাম্যহীন করে দিচ্ছে? দিনে কাজের চাপ যতই থাকুক না কেন, শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখা কিন্তু অসম্ভব নয়; শুধু দরকার একটু সচেতনতা, কিছু ছোট্ট পরিবর্তন আর নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া।
অনেকেই ভাবেন, ডেস্ক জব মানেই তো সারাদিন মন দিয়ে কাজ করা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি যতই মনোযোগী হোন না কেন, যদি শরীর সাড়া না দেয়, যদি মনই ক্লান্ত হয়ে যায়, তবে সেই মনোযোগ কতটা কার্যকর?
বাস্তবতা হলো, টানা বসে থাকা শুধু আপনার ঘাড়-পিঠে নয়, আপনার এনার্জি, ফোকাস আর মানসিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আপনি চাইলে কম্পিউটারের সামনে থেকেই আপনার কর্মদক্ষতা বজায় রাখতে পারেন, একঘেয়েমি ঝেড়ে ফেলতে পারেন এবং শরীর-মনকে রাখতে পারেন প্রাণবন্ত ও চাঙ্গা। চলুন জেনে নিই এমন কিছু কার্যকরী তথ্য যা আপনার অফিস বা ঘরের ডেস্ককেই বদলে দিতে পারে স্বাস্থ্যকর এক কর্মপরিবেশে।
সঠিক ভঙ্গিতে বসা মানেই ক্লান্তি কম, ফোকাস বেশি
ডেস্কে বসে কাজ মানেই শরীরে চাপ পড়বে এটা অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে বেশিরভাগ শারীরিক সমস্যার মূলেই থাকে ভুলভাবে বসার অভ্যাস। কেউ হয়তো সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করেন, কেউ আবার হেলান দিয়ে আরাম খোঁজেন। কিন্তু দুই কৌশলই ক্ষতিকর পিঠ, ঘাড় এবং কাঁধে চাপ পড়ে, ব্যথা হতে থাকে, আর ক্লান্তি তো লেগেই থাকে।
বসার সঠিক নিয়ম
>> মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন, যেন আপনার শরীর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে থাকে। প্রয়োজনে কোমরের পেছনে একটি ছোট কুশন রাখতে পারেন, যা পিঠকে সাপোর্ট দেবে কিন্তু চেপে ধরবে না। এতে ব্যাক পেইনের আশঙ্কা কমবে।
>> মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন, যেন আপনার শরীর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে থাকে। প্রয়োজনে কোমরের পেছনে একটি ছোট কুশন রাখতে পারেন, যা পিঠকে সাপোর্ট দেবে কিন্তু চেপে ধরবে না। এতে ব্যাক পেইনের আশঙ্কা কমবে।
>> কাঁধ ও গলা যেন স্বাভাবিক থাকে, কাঁধ যেন কুণ্ঠিত না হয়। কিবোর্ড ও মাউস কনুইয়ের সমান উচ্চতায় থাকলে কাঁধ ও হাত আরাম পায়। এই ছোট বিষয়টি আপনাকে ঘাড়ের ব্যথা, কাঁধের ম্যাজম্যাজ ভাব বা হাতে অবশ হয়ে যাওয়ার মতো বিরক্তিকর সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা করবে।
>> যারা খাতা-কলমে কাজ করেন বা পড়াশোনা করেন তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। ঘাড় গুঁজে না বসে সোজা হয়ে বসা, যেন দীর্ঘক্ষণ কাজেও ক্লান্তি না আসে।
একটানা কাজ নয়, নিন ছোট বিরতি
সঠিক ভঙ্গিতে বসলেও যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা এক জায়গায় বসে থাকেন তাতেও সমস্যা হবে। রক্ত চলাচল ধীর হয়ে পড়ে, জয়েন্টগুলোতে জড়তা আসে, মনেও জমে ওঠে ক্লান্তির পরত। তাই নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ না করে মাঝে মাঝে বিরতি নিন।
সমাধান
>> এই সমস্যার সমাধানে বেশ কার্যকরী ‘পমোডরো টেকনিক’ (এটি একটি টাইম ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট সময় ধরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন এবং মাঝেমধ্যে বিরতি নিয়ে নিজের মন ও শরীরকে পুনরায় সতেজ করতে পারেন)। এই টেকনিকে একটি বড় কাজকে ভেঙে নেওয়া হয় চারটি ২৫ মিনিটের সেশনে। প্রতিটি সেশনের পর ৫ মিনিট বিরতি। আর চতুর্থ সেশনের পর নিন একটু বড় ১৫-২০ মিনিটের বিরতি। এই সময়টায় উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করুন, হাত-পা মেলান কিংবা সামান্য স্ট্রেচিং করে নিন। এই ছোট বিরতিগুলোই আপনাকে সারাদিন চাঙা রাখতে সাহায্য করবে।
এই পদ্ধতি শুধু শরীরকেই সতেজ রাখে না, মনোযোগও বাড়ায়। কারণ একটানা দীর্ঘ সময় কাজ করলে মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু ছোট ছোট ফোকাসড সেশনে কাজ করলে উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়ে যায়।
চোখের যত্ন নিন
কম্পিউটার স্ক্রিনে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, জ্বালা করা, ঝাপসা দেখা বা মাথাব্যথা হতে পারে। তাই ২০:২০:২০ নিয়ম মেনে চলুন। প্রতি ২০ মিনিট পর, ২০ সেকেন্ডের জন্য, ২০ ফুট দূরের কিছু দেখুন। এছাড়া কাজের মাঝে চোখ বন্ধ করে কয়েকবার গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিন। চাইলে চোখে পানির ঝাপটাও দিতে পারেন।
পানি ও পুষ্টি ঠিক রাখুন
অনেকেই কাজের ব্যস্ততায় পানি খেতে ভুলে যান। এতে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে যায় এবং মাথা ভার লাগে। তাই ডেস্কে সবসময় পানির বোতল রাখুন। প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ১ গ্লাস পানি পান করুন। দুপুরের খাবারে ভারী বা অতিরিক্ত তেল-মসলা পরিহার করুন। কাজের মাঝে হালকা স্ন্যাক্স হিসেবে বাদাম, ফল বা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন।
কাজের পরিবেশকে বানান মনোরম
কাজের জায়গা যদি বিশৃঙ্খল হয়, তাহলে মনেও অস্থিরতা জন্ম নেয়। তাই ডেস্কটিকে রাখুন গোছানো, পরিচ্ছন্ন ও প্রেরণাদায়ক। ডেস্কে রাখুন একটি ছোট ইনডোর প্ল্যান্ট বা প্রিয় কোনো জিনিস। পরিবেশে হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক রাখতে পারেন, যেটা মনকে শান্ত রাখবে। সময় ও কাজের তালিকা রাখতে পারেন চেকলিস্টে বা ডিজিটাল টুলে।
একটু ‘মাইন্ড রেস্ট’
শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্ককেও সময় দিন একটু রিফ্রেশ হওয়ার। প্রতি কাজের সেশনের আগে ৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে বসে থাকুন। কিছু ভাববেন না, শুধু নিঃশ্বাসের গতি বা চোখের সামনের কালো অন্ধকারের দিকে মনোযোগ দিন। চাইলে একটা সুন্দর দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন। এই ছোট্ট মেডিটেশন ব্রেনকে বিশ্রাম দেয়, মনকে চাপমুক্ত রাখে আর কাজের মধ্যে নতুন করে এনার্জি যোগায়। প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও এই প্র্যাকটিস করুন।
ডেস্ক-জব মানেই ক্লান্তি, ব্যথা আর ওজন বাড়ার ঝুঁকি এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। একটু সচেতনতা, কিছু কার্যকর টেকনিক আর শরীর-মনকে সময় দেওয়ার মানসিকতা থাকলেই ডেস্কে বসে কাজ করাও হতে পারে আরামদায়ক, উপভোগ্য ও কার্যকর। শরীর যত সুস্থ থাকবে, মনও তত ফোকাসড থাকবে এটাই কর্মদক্ষতার মূল চাবিকাঠি। ছোট পরিবর্তনই আনতে পারে বড় ফল। তাই আজ থেকেই শুরু হোক পরিবর্তনের যাত্রা।
কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে থেকেও আপনি থাকতে পারেন চাঙা | ডা আবিদা সুলতানা
You can stay energized even while in front of a computer screen | Dr. Abida Sultana
কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে থেকেও আপনি থাকতে পারেন চাঙা | ডা আবিদা সুলতানা
You can stay energized even while in front of a computer screen | Dr. Abida Sultana
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health
- ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।
Follow Me -
Facebook : Dr. Abida Sultana
Youtube : Dr. Abida Sultana
tiktik : Dr. Abida Sultana
No comments