Header Ads

সিজারের পর পেটের বাড়তি চর্বি কমানোর সেরা উপায় | ডা আবিদা সুলতানা

সিজারের পর পেটের বাড়তি চর্বি কমানোর সেরা উপায়, ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health

মাতৃত্ব নারীর জীবনের যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তেমনি গর্ভধারণ নারীর শরীরে নানা পরিবর্তনও নিয়ে আসে। তাই অনেক মায়ের জন্য সন্তান জন্মের পর শারীরিক পরিবর্তন বিশেষ করে পেটের চর্বি বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত দৈহিক ওজন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সিজারিয়ান ডেলিভারির পর ওজন কমানোর প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হয়ে ওঠে, তাদের ক্ষেত্রে পেটের চর্বি কমানো আরও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করলে সঠিক ডায়েট, ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমেই এর সমাধান সম্ভব।


গর্ভধারণের পর শরীরের পরিবর্তন 

গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের তারতম্য ঘটে, যা মেদ জমার একটি বড় কারণ। এছাড়া এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তনের ফলে শরীর চর্বি সংরক্ষণ করে। ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি হ্রাস পায়, যা চর্বি জমার অন্যতম কারণ। গর্ভাবস্থায় পেটের আকার স্বাভাবিকভাবেই অনেকখানি বেড়ে যায়। গর্ভের শিশুকে জায়গা দেওয়ার জন্য পেটের পেশি ও চামড়াও অনেক প্রসারিত হয়। ফলে ডেলিভারির পরও মায়ের পেটের আকার বড় থেকে যায়। মেটাবলিজম কমে যায়, যা ওজন কমানোর গতি ধীর করে।

সিজারিয়ান ডেলিভারির পরে পেট কমানোর জন্য ধৈর্য, সঠিক ডায়েট এবং ব্যায়ামের সমন্বয় প্রয়োজন। নিচে কয়েকটি কার্যকর উপায় উল্লেখ করা হলো :

১. শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো : এটি ওজন কমানোর একটি কার্যকর উপায়। কেননা স্তন্যপান করানোর ফলে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ হয়। এটি অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে গর্ভাশয় সংকোচন করতে সাহায্য করে, ফলে পেটের আকার দ্রুত ছোট হয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬ মাস পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং করলে প্রসব-পরবর্তী ওজন দ্রুত হ্রাস পায়।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

ওজন কমানোর জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কী খাবেন

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার : প্রতি বেলার খাবারে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, ডিম, মুরগি, ডাল, ছোলা, দুধ, টক দই, বাদাম, ইত্যাদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার পেশির গঠনে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে; যা শরীরকে দীর্ঘ সময় এনার্জি দেয়, ক্লান্তি দূর করে, শরীরের ক্ষয়পূরণে সহায়ক এবং ত্বকের জন্যও উপকারী। 

• ফাইবার ও কমপ্লেক্স কারবোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার : প্রতি বেলার খাবারে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমি রঙিন শাকসবজি ও সালাদ এতে প্রচুর ভিটামিন মিনারেলস ও ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়তা করে, প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম টাটকা কম মিষ্টি ফল ও শাকসবজি খাবেন। এছাড়াও ফাইবারযুক্ত খাবার হিসেবে অন্তত ২ বেলার খাবারে পরিমিত পরিমাণে গোটা শস্য তথা লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস, মিষ্টি আলু, ভুট্টা রাখলে এই জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ হজম হতে সময় নেয়, ফলে বেশি সময় ধরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও এনার্জি সাপ্লাই করে।

• স্বাস্থ্যকর ফ্যাট : প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে অবশ্যই খাবেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক গুড ফ্যাট, কেননা দৈনিক খাবারে গুড ফ্যাট (ভালো চর্বি) রাখলে এটি ক্ষুধা কমাতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে-ঘ্রেলিন ক্ষুধা উদ্রেককারী হরমোন, গুড ফ্যাট এটিকে দমন করে, ফলে ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। লেপ্টিন তৃপ্তির অনুভূতি তৈরি করে, যা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয়। গুড ফ্যাট ধীরে হজম হয়, ফলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগে না, পেট ভরা রাখে। কার্বোহাইড্রেট দ্রুত হজম হয়ে রক্তে শর্করা বাড়ায়, যা দ্রুত ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। ফ্যাট ধীরে হজম হয়, তাই দীর্ঘ সময় সতেজ ও এনার্জেটিক অনুভব হয়। ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করে ফলে সুগার ক্র্যাভিং কম হয় এবং ফ্যাট জমা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ভালো ফ্যাট যেমন মোনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, বাদাম, নারকেল তেল) থার্মোজেনেসিস (উত্তাপ উৎপাদন) বাড়িয়ে ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে, মেটাবলিজম বাড়ায়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ফ্যাট-বার্নিং এনজাইম সক্রিয় করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।


গুড ফ্যাটের কিছু উৎস্য

ফ্যাটি ফিশ (ইলিশ,টেংরা পুটি কৈ পাবদা মলা ঢ্যালা, স্যামন, টুনা ) –প্রোটিন ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ, সপ্তাহে অন্তত ৪ দিন মাছ খাবেন। সরিষার তেল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, খাঁটি ঘি বা মাখন– রান্নায় ব্যবহার করুন পরিমিত পরিমাণে। চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড– ফাইবার ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ। বাদাম ও বিচি (আমন্ড, আখরোট, সূর্যমুখী ও মিষ্টি কুমড়ার বিচি) –হেলদি স্ন্যাকস। অ্যাভোকাডো–সালাদ বা স্মুদি-তে যোগ করুন। তাই ওজন কমানোর জন্য লো-ফ্যাট নয়, স্মার্ট ফ্যাট বেছে নেওয়া উচিত।

• প্রচুর পানি : প্রসূতিকালীন ডায়েটে প্রতিদিন অন্তত ২.৫-৩.৫ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন, সেই সঙ্গে হাফ লিটার দুধ ও খেতে পারেন, এতে মায়ের বুকের দুধের সরবরাহ ভালো থাকবে। সেই সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের শোষণ বাড়বে। এছাড়াও প্রতিদিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত পানীয় যেমন- গ্রিন টি, জিরা বা আদা সিদ্ধ পানি, লেবু পানি ইত্যাদি ও মেদ চর্বি কমাতে সহায়তা করে যদি সারা দিনের খাবারটা ব্যালান্সড থাকে।


কী খাবেন না ?

এই খাবারগুলো বেশি ক্যালোরি, চিনি, লবণ ও কেমিক্যালযুক্ত, যা ওজন বাড়ায়, পেটের মেদ বাড়ে এবং মেটাবলিজম ধীর করে তাই ওজন কমাতে নিম্নলিখিত প্রসেসড ফুড বাদ দিতে হবে, রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট: হোয়াইট ব্রেড, ময়দার রুটি, সাদা চাল, সাদা আটা। ফাস্ট ফুড: বার্গার, পিজ্জা, ফ্রাইড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। প্যাকেটজাত স্ন্যাকস: চিপস, বিস্কুট, প্রক্রিয়াজাত বাদাম, ইনস্ট্যান্ট নুডলস। মিষ্টিজাতীয় খাবার: ডোনাট, কেক, পেস্ট্রি, চকোলেট, আইসক্রিম। সুগারযুক্ত পানীয়: সফট ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংক, প্যাকেটের জুস, ফ্লেভার্ড মিল্ক। ফ্রোজেন খাবার: সসেজ, রেডি-টু-ইট মিল, ইনস্ট্যান্ট পিৎজা, প্রক্রিয়াজাত মাছ ও মাংস।


৩. ব্যায়াম ও শারীরিক ক্রিয়া

শরীরকে দ্রুত ফিট করে তুলতে, শক্তি বাড়াতে এবং মানসিক প্রশান্তি দিতে সাহায্য করবে, এটি প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন প্রতিরোধে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত ডেলিভারির পর প্রথম ৬ সপ্তাহ দৌড়ঝাঁপ বা ভারি কোনো ব্যায়াম না করাই ভালো। 


সিজারিয়ানের পর যা যা করবেন -

• প্রথম ৬ সপ্তাহ : শুধুমাত্র হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।

• ৬ সপ্তাহ পর : ডাক্তার পরামর্শ দিলে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ, কেগেল এক্সারসাইজ ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ শুরু করুন।

• ৩ মাস পর : লো-ইমপ্যাক্ট ব্যায়াম যেমন প্ল্যাঙ্ক, লেগ রেইজ, যোগব্যায়াম শুরু করতে পারেন।

•  ৬ মাস পর : নিয়মিত কার্ডিও এক্সারসাইজ যেমন ব্রিস্ক ওয়াকিং, সাইক্লিং, সুইমিং করা যেতে পারে।


৪. পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কোর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা পেটে চর্বি জমার অন্যতম কারণ। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। মেডিটেশন ও শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যায়াম ব্রিদিং এক্সারসাইজ স্ট্রেস কমাতে, প্রসব-পরবর্তী মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।


৫. অ্যাবডোমিনাল বেল্ট ব্যবহার

অনেক মা পোস্টপার্টাম বেল্ট ব্যবহার করেন, যা পেটের মাংসপেশিকে সংকুচিত করতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


৬. ধৈর্য ধরুন ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করুন

ওজন কমানোর জন্য ব্যক্তিগত গাইডলাইন পেতে ডাক্তার ও নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নিন। সিজারের পর পেটের চর্বি কমাতে সময় লাগে। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ক্র্যাশ ডায়েট অনুসরণ করা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর বরং ধীরে ধীরে ওজন কমানোই নিরাপদ ও কার্যকর।

ধৈর্য ধরে এ পদ্ধতিগুলো মেনে চললে, ধীরে ধীরে আগের আকৃতি ফিরে পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ওজন কমানোর সর্বোত্তম উপায় ।


ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health

ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।


Follow Me -

Facebook : Dr. Abida Sultana 

Youtube : Dr. Abida Sultana 

X : Dr. Abida Sultana 

tiktik : Dr. Abida Sultana 

No comments

Powered by Blogger.