অনিরাপদ ডায়ালাইসিসে ৭০ ভাগ রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন ভাইরাসে | ডা আবিদা সুলতানা
কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারানোর পর বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় ডায়ালাইসিস। কিন্তু হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস পজিটিভ কিডনি রোগীদের জন্য সংশ্লিষ্ট সব হাসপাতালে পৃথক ডায়ালাইসিস মেশিনের ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেক হাসপাতাল নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একই মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছে। এতে হেপাটাইটিস নেই এমন কিডনি রোগীর ভাইরাসটিতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে ডায়ালাইসিস মেশিন সংকটে হেপাটাইটিস পজিটিভ রোগীরা চরম ভোগন্তিতে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলেছেন, প্রতি মুহূর্তে বিপাক কার্যক্রমের ফলে মানবদেহে তৈরি হওয়া বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দেয় কিডনি। মানুষের শরীরে যখন কিডনি কাজ করে না, তখন অনেক ধরনের বর্জ্য পদার্থ জমে যায়। এক্ষেত্রে কিডনির বিকল্প হিসাবে বর্জ্যগুলো পরিশোধিত করার যে প্রক্রিয়া, সেটিকে ডায়ালাইসিস বলা হয়। কিডনি চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন আছে। কিন্তু অনেক চিকিৎসাকেন্দ্রে গাইডলাইন না মেনে ডায়ালাইসিস এবং অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের কারণে অনেক রোগী হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, যেসব কিডনি রোগী আগে থেকেই হেপাটাইটিস পজিটিভ তাদের জন্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চাহিদার তুলনায় ডায়ালাইসিস মেশিন খুবই অপ্রতুল। এমন বাস্তবতায় অনিরাপদ ডায়ালাইসিসে ৭০ ভাগ রোগী হেপাটাইটিস ‘বি’ অথবা হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছেন। আক্রান্তদের লিভার সমস্যা, হজমশক্তি কমে যাওয়া ও পায়খানা সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। দেলোয়ার হুসেন নামে এক রোগীর স্বজন যুগান্তরকে বলেন, তার খালুর ডায়াবেটিস থেকে কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ায় বিআইএইচএস ও বারডেম জেনারেলসহ একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানো হয়। খালু একপর্যায়ে হেপাটাইটিস পজিটিভ হন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসায় পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে তাকে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করানো হয়। সেখানেও হেপাটাইটিস আক্রান্তদের ডায়ালাইসিস মেশিন সংকটে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নেওয়া হয়। গণস্বাস্থ্যে সিরিয়াল না পেয়ে পাশেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এভাবে ডায়ালাইসিস বিড়ম্বনায় শেষ পর্যন্ত খালুকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
১৩ বছর ধরে ডায়ালাইসিস নেন কিডনি রোগী জসিম উদ্দিন (৪০)। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে তিনিও একপর্যায়ে হেপাটাইটিস পজিটিভ হন। কিন্তু সবখানে ডায়ালাইসিস মেশিন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, অনেক চেষ্টার পর জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ‘সি’ ভাইরাস পজিটিভ রোগীদের জন্য নির্ধারিত মেশিনে ডায়ালাইসিসের সুযোগ পেয়েছেন।
কিডনি রোগীদের নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি’ (ক্যাম্পস)। ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ বলেন, দেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতিবছর নতুন করে প্রায় ৪০ হাজার রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হন। আরও ২৪ থেকে ৩০ হাজার রোগীর হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে সাময়িক ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, সেবার অপ্রতুলতা ও ব্যয়বহুল হওয়ায় মাত্র ১০ শতাংশের মতো রোগী চিকিৎসা নিতে পারেন। বাকিরা পারেন না। তিনি আরও বলেন, হেপাটাইটিস কিডনি রোগীদের রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপদ স্ক্রিনিং জরুরি। একইসঙ্গে ‘সি’ ও ‘বি’ ভাইরাস পজিটিভ রোগীদের জন্য প্রত্যেক সেন্টারে আলাদা মেশিন রাখা উচিত।
সরকারের সঙ্গে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও ইউরোলজি হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেড’ রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দিচ্ছে। কিডনি ইনস্টিটিউটে স্যান্ডরের কনসালট্যান্ট ডা. শামসুন-নাহার যুগান্তরকে বলেন, স্যান্ডর পরিচালিত এই হাসপাতালে ৫৯টি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এখানে ‘সি’ ভাইরাস আক্রান্তদের জন্য ১০টি এবং ‘বি’ ভাইরাস পজিটিভ রোগীদের জন্য ৪টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। চট্টগ্রামে ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস পজিটিভদের জন্য ৬টি মেশিন রয়েছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি বিকল রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এর সঙ্গে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন রোগী। নিরপাদ রক্ত সঞ্চালনের অভাবে সবচেয়ে বেশি রোগীর হেপাটাইটিস ভাইরাস আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। নিয়ম থাকলেও অনেক হাসপাতাল রক্ত পরীক্ষা ছাড়াই ডায়ালাইসিস করায়। মানা হয় না গাইডলাইন। তথ্য গোপন করেন অনেক রোগীও। ফলে এক রোগী থেকে সংক্রমিত হচ্ছেন অনেক রোগী। ডায়ালাইসিস করতে হলে প্রশিক্ষিত নার্স, নেফ্রোলজিস্ট থাকা দরকার, যা ইন্টারন্যাশনাল প্রটোকল ফলো করে। ডায়ালাইসিস সেন্টারগুলোকে রেগুলেশনের মধ্যে আনা উচিত।
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health
- ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।
Follow Me -
Facebook : Dr. Abida Sultana
Youtube : Dr. Abida Sultana
tiktik : Dr. Abida Sultana
No comments