ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে বাঁচবেন যেভাবে | ডা আবিদা সুলতানা | How to avoid dust allergies | Dr. Abida Sultana
ডাস্ট বা ধুলাবালি থেকে অ্যালার্জি একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। গ্রীষ্মকালের শুষ্ক মৌসুম ও গরমে অনেকের সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে। ঘরের ধুলা, মাইট, পোষা প্রাণীর লোম বা ফাঙ্গাসের কারণে হাঁচি, কাশি, চোখ লাল হওয়া, শ্বাসকষ্ট এমনকি এক্সিমা পর্যন্ত হতে পারে। তবে কিছু সতর্কতা ও ঘরোয়া উপায় মেনে চললে ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ডাস্ট অ্যালার্জির লক্ষণ
১. ঘন ঘন হাঁচি বা নাক চুলকানো।
২. নাক বন্ধ বা সর্দি হওয়া।
৩. চোখ লাল, চুলকানি বা পানি পড়া।
৪. শ্বাস নিতে কষ্ট বা বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ।
৫. ত্বকে র্যাশ বা এক্সিমা
ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে বাঁচার ১০টি কার্যকর উপায়
১. বিছানা ও বালিশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন
ডাস্ট মাইট সবচেয়ে বেশি থাকে ম্যাট্রেস, কার্পেট, বালিশ ও কম্বলে। সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে বেডশিট, বালিশের কভার ও কম্বল ধুয়ে ফেলুন। এন্টি-অ্যালার্জেন কভার ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাবেন।
২. ঘর থেকে কার্পেট ও ভারী পর্দা কমিয়ে ফেলুন
কার্পেট ও মোটা পর্দায় ধুলা জমে থাকে। তাই ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো করুন, সেই সঙ্গে পাতলা পর্দা ব্যবহার করুন, যা সহজে ধোয়া যায়।
৩. ফিল্টারযুক্ত ভ্যাকুম ক্লিনার ব্যবহার করুন
কার্পেট ব্যবহার করতে চাইলে তা নিয়মিত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করুন। সাধারণ ভ্যাকুম ক্লিনার ধুলা পুরোপুরি সরাতে পারে না। ফিল্টারযুক্ত ভ্যাকুম ক্লিনার ব্যবহার করলে ধুলার কণা ফিরে আসে না। সপ্তাহে ২-৩ বার ভ্যাকুম করুন।
৪. এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন
বদ্ধ ঘরে এয়ার পিউরিফায়ার রাখলে বাতাসের ধুলা, পোলেন ও পোষা প্রাণীর লোম ফিল্টার হয়ে যায়। শোবার ঘরে এটি রাখলে রাতে শ্বাসকষ্ট কম হবে।
৫. ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ডাস্ট মাইট ও ফাঙ্গাস আর্দ্র পরিবেশে বংশবিস্তার করে। ঘরের আর্দ্রতা ৫০ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টা করুন। এয়ার কন্ডিশনার বা ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
৬. পোষা প্রাণীকে নিয়মিত গোসল করান
পোষা প্রাণীর লোম ও ত্বকের কোষ অ্যালার্জি বাড়ায়। সপ্তাহে একবার তাদের গোসল করালে অ্যালার্জেন কমবে। শোবার ঘরে পোষা প্রাণী না রাখাই ভালো।
৭. বই ও জিনিসপত্র ঢেকে রাখুন
বই ও খেলনা জাতীয় জিনিসপত্রে ধুলা জমে। এসব কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং নিয়মিত ডাস্টিং করুন।
৮. ধূমপান ও সুগন্ধি এড়িয়ে চলুন
সিগারেটের ধোঁয়া ও রুম ফ্রেশনার অ্যালার্জি বাড়াতে পারে। বাড়িতে ধূমপান করবেন না এবং সুগন্ধিযুক্ত ক্লিনিং প্রোডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৯. প্রাকৃতিক ক্লিনিং পদ্ধতি ব্যবহার করুন
ভিনেগার, বেকিং সোডা ও লেবু দিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। কেমিক্যাল ক্লিনার অ্যালার্জি বাড়াতে পারে।
১০. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
যদি অ্যালার্জি খুব বেশি হয়, তবে অ্যালার্জিস্টের পরামর্শ নিন।
ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই নানা ধরনের ওষুধ সেবন করেন। তবে চাইলে কিছু ঘরোয়া উপায়েও ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। জেনে নিন ডাস্ট অ্যালার্জি রোধের ঘরোয়া উপায়।
১. মধু ডাস্ট অ্যালার্জি প্রতিরোধে কাজ করে। গবেষণা অনুযায়ী, মধু পরিবেশে উপস্থিত অ্যালার্জেনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও মধুতে থাকা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য অ্যালার্জি ও ব়্যাশ কমায়।
২. টকদই খেয়েও অ্যালার্জি সারাতে পারেন। কারণ এতে থাকে প্রোবায়োটিক। এই উপাদানটি ডাস্ট অ্যালার্জি প্রতিরোধে অত্যন্ত উপকারী। অ্যালার্জি মূলত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়ে থাকে। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত টকদই খেতে পারেন।
৩. আপেল সিডার ভিনেগারও ডাস্ট অ্যালার্জি প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এজন্য এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খাবার কিছুক্ষণ আগে পান করলে উপকার পাবেন। এটি একই সঙ্গে ওজন কমাতেও কাজ দেয়।
৪. ডাস্ট অ্যালার্জির প্রভাব কাটাতে স্টিম নিতে পারেন। এজন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিয়ে তাতে অল্প একটু মেনথল দিয়ে বাষ্প নাক এবং মুখের সাহায্যে গ্রহণ করুন। তবে মেনথলে অ্যালার্জি আছে কিনা তা আগে পরীক্ষা করে নিবেন।
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের স্টিম নেওয়ার যন্ত্র বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। অ্যালার্জির প্রভাব কমাতে কমপক্ষে ১০ মিনিট স্টিম নিন। এতে নাকের বন্ধভাব দূর হবে।
৫. ডাস্ট অ্যালার্জির চিকিৎসায় ঘি খুব ভালো কাজ করে। এজন্য আধা চা চামচ ঘি এর সঙ্গে পরিমাণমতো গুড় মিশিয়ে নিতে পারেন।
অনিয়ন্ত্রিত হাঁচি ও অ্যালার্জির প্রভাব কমাতে এক চা চামচ ঘি খেতে পারেন। এর প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য অনুনাসিক পথ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে ক্রমাগত হাঁচির সমস্যাও সমাধান করে।
৬. ডাস্ট অ্যালার্জি সারাতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিক এই ভেষজ উপাদানটি ডাস্ট অ্যালার্জির উপসর্গ কমায়।
এজন্য ৩-৪ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার রস পানিতে মিশিয়ে দিনে ২ বার পান করুন। অ্যালোভেরাতে ব্যথানাশক এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকে। যা ডাস্ট অ্যালার্জির প্রভাব কমায়।
ডাস্ট অ্যালার্জি পুরোপুরি দূর করা কঠিন, কিন্তু সঠিক পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার, এয়ার ফিল্টার ব্যবহার এবং পোষা প্রাণীর যত্ন নিলে ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। তবে অ্যালার্জির সমস্যা বেশি হলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে বাঁচবেন যেভাবে | ডা আবিদা সুলতানা
How to avoid dust allergies | Dr. Abida Sultana
ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে বাঁচবেন যেভাবে | ডা আবিদা সুলতানা
How to avoid dust allergies | Dr. Abida Sultana
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health
- ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।
Follow Me -
Facebook : Dr. Abida Sultana
Youtube : Dr. Abida Sultana
tiktik : Dr. Abida Sultana
No comments