শিশুদের স্ক্যাবিস থেকে রক্ষায় করণীয় | ডা আবিদা সুলতানা
স্ক্যাবিস হলো এক ধরনের চর্মরোগ। যা একটি পরজীবী কীট Sarcoptes scabiei দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই পরজীবী ত্বকের ভেতরে গর্ত করে ডিম পাড়ে এবং সেখানে বাস করে। এর ফলে ত্বকে তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ি দেখা যায়। এটি ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় খুব দ্রুত একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের দ্রুত সংক্রমিত করে। তাই শিশুদের স্ক্যাবিস থেকে রক্ষা করতে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
শিশুদের স্ক্যাবিস হলে সাধারণত কিছু উপসর্গ দেখা দেয়৷ তীব্র চুলকানি হয়। বিশেষ করে রাতে ঘুমের সময়। ত্বকে ছোট ছোট গর্ত বা ফুসকুড়ি, যা অনেক সময় গুচ্ছ আকারে থাকে। পিঠ, পেট, কনুই, আঙুলের ফাঁক, হাতের কব্জি, গোপনাঙ্গ ও কোমরের চারপাশে চুলকানির উপদ্রব বেশি দেখা যায়। চুলকানোর কারণে ঘা, ইনফেকশন বা পুঁজও হতে পারে।
স্ক্যাবিসের সংক্রমণ কিভাবে হয় ?
স্ক্যাবিস খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগ স্থাপনে। একই বিছানা, কাপড় বা তোয়ালে ব্যবহার করলে। স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার, বা খেলাধুলার সময় সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে এলে স্ক্যাবিস হতে পারে।
শিশুদের স্ক্যাবিস থেকে রক্ষায় করণীয়
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
পরিচ্ছন্নতা স্ক্যাবিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুদের নিয়মিত গরম পানি ও সাবান দিয়ে গোসল করাতে হবে। জামাকাপড়, বিছানার চাদর, বালিশের কভার ইত্যাদি প্রতিদিন ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে। ব্যবহৃত তোয়ালে, জামাকাপড় ও অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র কারো সঙ্গে শেয়ার না করতে শেখাতে হবে।
সংক্রামিত শিশুদের আলাদা রাখা
যদি কোনো শিশু স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়, তবে তাকে অন্য শিশুদের থেকে কিছুদিন আলাদা রাখতে হবে।একই বিছানা বা খেলনা যেন অন্য শিশু ব্যবহার না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা
স্ক্যাবিস হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত স্ক্যাবিস নিরাময়ে পারমেথ্রিন ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুরো শরীরে, গলা থেকে পা পর্যন্ত, ক্রিম প্রয়োগ করতে হবে এবং নির্ধারিত সময় পরে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও একসাথে চিকিৎসা নিতে হতে পারে, কারণ স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়ায়।
পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখা
আক্রান্ত শিশুর ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর ও তোয়ালে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়ার পরে এগুলো সূর্যের তাপে ভালোভাবে শুকাতে হবে।যেসব বস্তু ধোয়া যায় না, সেগুলো প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে ৭২ ঘণ্টার জন্য রেখে দিলে কীট মারা যায়।
স্কুল বা ডে-কেয়ার কর্তৃপক্ষকে জানানো
স্ক্যাবিস ছোঁয়াচে হওয়ায় শিশুর স্কুল বা ডে-কেয়ার সেন্টারকে জানানো জরুরি, যাতে তারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে এবং অন্যান্য শিশুদের সংক্রমণ থেকে বাঁচানো যায়।
শিশুকে বোঝানো ও শেখানো
যেহেতু শিশু অনেক সময় নিজের অজান্তে রোগ ছড়ায়, তাই তাকে বোঝাতে হবে। কারো তোয়ালে বা পোশাক ব্যবহার না করতে, বেশি ঘনিষ্ঠভাবে লম্বা সময় ধরে খেলাধুলা না করতে, যদি কারো চুলকানি দেখা যায়। নিজের চুলকানি বা র্যাশ সম্পর্কে বাবা-মাকে জানাতে।
অতিরিক্ত যত্ন
শিশুর নখ ছোট করে কেটে রাখা উচিত, যাতে চুলকানোর ফলে ঘা না হয়। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে শিশুর কাপড় ও বিছানা প্রতিদিন পরিবর্তন করা উচিত। ঘরের ফ্লোর, টেবিল ও খেলনার মতো ব্যবহার্য জিনিস নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।
সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে স্ক্যাবিস থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব।
ডা আবিদা সুলতানা, Dr Abida Sultana, health, fitness, healthy life, সফলতার সূত্র, আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য, asun sustho thaki, mental health
- ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।
Follow Me -
Facebook : Dr. Abida Sultana
Youtube : Dr. Abida Sultana
tiktik : Dr. Abida Sultana
No comments